কক্সবাজারের বিশেষ ট্রেনটি পূর্বনির্ধারিত সিদ্ধান্তের ১০ দিন আগেই বন্ধ ঘোষণার পর এ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা দেখা যাচ্ছে। বিশেষ করে এই রুটে ট্রেন বাড়ানোর দাবির বিপরীতে চালু থাকা ট্রেনটিও বন্ধের পর তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে যাত্রী অধিকার সংগঠনগুলো।
যদিও রেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আসন্ন ঈদুল আযহাকে সামনে রেখে রেলের প্রস্তুতির অংশ হিসেবেই বিশেষ ট্রেনটি বন্ধ রাখা হয়েছে।
ট্রেন বন্ধের পক্ষে দেয়া যুক্তি নিয়ে ‘মিশ্র প্রতিক্রিয়া’ জানিয়েছেন বিশ্লেষকরা। কারও মতে, উৎসব উপলক্ষে ‘ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্টের’ অংশ হিসেবে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হতে পারে, আবার কেউ বলছেন ট্রেন বন্ধের কারণ হিসেবে জনবল ও ইঞ্জিন সংকটের বিষয়টি একেবারেই ‘গ্রহণযোগ্য নয়’।
জানাযায় ঈদুল ফিতর উপলক্ষে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে আটই এপ্রিল ‘কক্সবাজার স্পেশাল’ নামে একটি বিশেষ ট্রেন চালু করে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।
আর পূর্বাঞ্চল রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ নাজমুল ইসলাম জানান স্পেশাল এই ট্রেনটি ঈদের আগে পাঁচ দিন ও পরে পাঁচ দিন মিলিয়ে মোট ১০ দিন চালুর পরিকল্পনা করা হয়েছিল।
পরবর্তী সময়ে যাত্রীদের চাহিদা ও রেলওয়ের সক্ষমতা বিবেচনায় রেখে দফায় দফায় এই ট্রেন চালু রাখার মেয়াদ বাড়ানো হয়।
সবশেষ বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী জুনের ১০ তারিখ পর্যন্ত এই ট্রেন চালু রাখার কথা ছিল।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে গত আটই মে বিশেষ ট্রেনটি স্থায়ী করাসহ এই রুটে নতুন আরও একটি ট্রেন চালুর জন্য রেল কর্তৃপক্ষকে স্মারক প্রদান করে চট্টগ্রাম-দোহাজারী-কক্সবাজার রেলওয়ে যাত্রী কল্যাণ পরিষদ।
কিন্তু নির্ধারিত তারিখের ১০ দিন আগেই অর্থাৎ ৩০ই মে ট্রেনটি বন্ধ করে দেওয়া হয়।
রেল কর্তৃপক্ষ বলছে, কক্সবাজার স্পেশাল ট্রেন বন্ধ রাখতে বিভাগীয় রেলওয়ে ব্যবস্থাপকের কার্যালয়ে (ডিআরএম) চিঠি দেয় রেলওয়ের যান্ত্রিক বিভাগ।
এতে রেলওয়ের মহাপরিচালকের কার্যালয় থেকে কক্সবাজার স্পেশাল-৩ ও ৪ ট্রেনটি আগামী ১০ জুন পর্যন্ত চলাচলের যে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল ইঞ্জিন ও লোকোমাস্টারের সংকটের কারণে ৩০ই মে থেকে তা বাতিলের কথা উল্লেখ করা হয়।
এদিকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে ট্রেন বন্ধের খবরটি গণমাধ্যমে আসার পর যাত্রী কল্যাণ সমিতির পক্ষ থেকে দেয়া এক বিবৃতিতে ‘বাস মালিকদের প্রেসক্রিপশনে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটের জনপ্রিয় ট্রেন সার্ভিস কক্সবাজার স্পেশাল ট্রেন বন্ধ করা হচ্ছে’ বলে অভিযোগ করেন সংগঠনটির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী।
এমনকি বাস মালিকদের স্বার্থরক্ষায় রেল প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলেও বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।
তাদের এই বিবৃতিকে কেন্দ্র করে সামাজিক মাধ্যমে আলোচনা ও সমালোচনার ঝড় ওঠে।
তবে পূর্বাঞ্চল রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ নাজমুল ইসলাম বলেন,নিয়মিত ট্রেন না হওয়ার সত্ত্বেও দেড় মাসের ওপরে ট্রেনটি চলেছে। আর রেলের ইঞ্জিন ‘লিংকে’ বা পালাক্রমে কাজ করে। ফলে একটি ইঞ্জিন চলমান থাকলে, আরেকটি থাকে সার্ভিসিংয়ে।এবং
দীর্ঘ সময় ধরে স্পেশাল ট্রেন চলমান থাকায় অন্যান্য ট্রেনের ওপরও প্রভাব পড়ছে।
এছাড়াও আসন্ন ঈদুল-উল আজহায় আরও ১০ জোড়া ‘ঈদ স্পেশাল’ ট্রেন চলবে। যার কারণে ইঞ্জিনের সংকট এবং অন্যান্য সীমাবদ্ধতার মধ্যেই ‘রিসোর্সের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করা হচ্ছে’ বলে মন্তব্য করেন তিনি।
তিনি বলেন আগেরবারের মতো এবারও কেবল ঈদুল-উল আযহাকে উপলক্ষ করেই আবার ১২ তারিখ থেকে ঈদ স্পেশাল নাম নিয়ে ট্রেনটি ১০-১২ দিন চলবে।
এরপর নিয়মিত ট্রেন না হওয়ায় ঈদের পর এটি বন্ধ হয়ে যাবে।
“স্পেশাল মানে যেকোনো সময় চলবে, তারপর বন্ধ হয়ে যাবে,” বলে মন্তব্য করেন তিনি।
উল্লেখ্য আঠারো হাজার কোটি টাকারও বেশি ব্যয়ে চট্টগ্রামের দোহাজারি থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত নির্মিত হয় ১০২ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের রেললাইন।
গত বছর ১১ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নতুন রেল লাইনটির উদ্বোধনের পর পয়লা ডিসেম্বর থেকে ঢাকা-কক্সাবাজার রুটে ট্রেন চলাচল শুরু হয়, যেটির নাম রাখা হয় কক্সাবাজার এক্সপ্রেস।
পরে এ বছর জানুয়ারিতে ঢাকা থেকে একই রুটে পর্যটক এক্সপ্রেস নামের আরও একটি ট্রেন চালু করা হয়।
এই দুটি ট্রেনই চট্টগ্রাম স্টেশনে বিরতি দিলেও শুধুমাত্র চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার যাতায়াতের কোনো পৃথক ট্রেন চালু করা হয়নি।
এনিয়ে চট্টগ্রামের মানুষ প্রতিক্রিয়া জানায় এবং বিভিন্ন নাগরিক প্ল্যাটফর্ম থেকে এই রুটে ট্রেন চলাচলের দাবি ওঠে।
রিপোর্টারের নাম 



















