০১:১৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫

আয় ও ব‍্যয়ের সাথে তাল মেলাতে পারছেনা দেশের ৬৮ শতাংশ মানুষ

বাংলাদেশে খাদ্য ব্যবস্থাপনা বহুমুখী সমস্যার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। দেশের প্রধান খাদ্যগুলোর দাম বেড়েছে। বিশেষ করে চাল, আটা ও আমিষের প্রধান উৎস মুরগির মাংস, ডিম, মাছ ও সবজির দাম বাড়তির দিকে। বেড়েছে আলু, পেঁয়াজ, আদা, কাঁচা মরিচ ও ফলের দামও।
বর্তমানে দেশের প্রত্যেক অঞ্চলেই নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোতে শুরু হয়েছে ‘বোবা কান্না’। বিশেষ করে লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়ে চলা দ্রব্যমূল্যের কারণে ক্ষোভে ফুঁসছেন নিম্ন ও মধ‍্যম আয়ের সাধারণ মানুষ। সামনের দিনগুলোতে এ দ্রব্যমূল্যের লাগাম টেনে না ধরলে নিম্ন ও মধ্যবিত্তের কান্না শেষ পর্যন্ত ক্ষোভের উদ্গীরণে রূপ নিতে পারে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণে সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময় ব্যবস্থা নিলেও পুরোপুরি সুফল ভোগ করতে পারছে না সাধারণ মানুষ । তবে দেখা যাচ্ছে না কালোবাজারি ঠেকানোর কার্যক্রম। অপ্রত্যাশিত এমন মূল্য বৃদ্ধি এ দেশে নতুন নয়। প্রতিদিন সকালে বাজারে ঢুকেই এ দেশের মানুষ জানতে পারে মূল্য বৃদ্ধির খবর। অথচ বিশ্বের যে কোনো দেশের ক্ষেত্রে জনগণকে জানিয়ে এমনটি ঘটলে জনগণ তাৎক্ষণিকভাবে ক্ষুব্ধ হয়ে পড়ে। ফলে জনসাধারণের কাছে সরকারকে জবাবদিহি করতে হয়। আর বাংলাদেশে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি যেন সাধারণ মানুষের নিত্যদিনের সঙ্গী। এর পেছনে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী পণ্যের দাম বাড়ানোর মতো খারাপ কাজটি করছে। আন্ডারগ্রাউন্ডে বসে থাকা এই শ্রেণির সবাই দাম নিয়ন্ত্রণ করছে। নীতিজ্ঞানহীন বিবেকশূন্য এক সম্প্রদায় এসব সমস্যায় ঘোলা পানিতে মাছ শিকারে তৎপর। তারা কখনো কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করছে, কখনো বা চোরাকারবারের মাধ্যমে সেই কৃত্রিম সংকটের শূন্যতা পূর্ণ করছে। পাশাপাশি জনসাধারণের ক্রয়ক্ষমতাও হ্রাস পাচ্ছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি। কেননা, গড়পড়তা আয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্য একটি বাজার ব্যবস্থা যে কোনো দেশের সরকারের কাছে তার জনগণের প্রাণের দাবি। দ্রব্যমূল্যের এ ঊর্ধ্বগতি থেকে পরিত্রাণের জন্য সরকারি ও বেসরকারি অভিজ্ঞ মহলের সুদৃষ্টি অবশ্যই থাকা প্রয়োজন। অন্তত চারটি ডাল-ভাত খেয়ে দুধে ভাতে বাঁচতে দেওয়া উচিত নিম্ন ও মধ‍্য আয়ের মানুষদেরকে।
বাহার ঊদ্দীন নামে এক চাকরিজীবি বলেন, তেল গ্যাস থেকে শুরু করে নিত্যপ্রয়োজনীয় সব পণ্যের দাম শুধু বাড়ছে আর বাড়ছে। সাধারণ মানুষ অসাধারণ হতে পারছে না বলে তাদের কষ্টের সীমা নেই। নুন আনতে পান্তা ফুরায় – প্রবাদটি আজ চরম সত্য হয়ে ঘাড়ে বসেছে।

এমন পরিস্থিতিতে দেশের ৬৮ শতাংশ মানুষ জীবনযাত্রার ব্যয় কমিয়ে টিকে থাকার চেষ্টা করছে। আর ৪৩ শতাংশ মানুষ বাকিতে খাবার কিনছে। বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডব্লিউএফপি) গত মাসে বাংলাদেশে খাদ্যের দাম বেড়ে যাওয়ার প্রভাব নিয়ে করা গবেষণা প্রতিবেদনে এই তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২২ সালে দেশের দারিদ্র্যসীমার নিচে থাকা মানুষের খাবার কেনার খরচ ছিল প্রতি মাসে মাথাপিছু ১ হাজার ৮৫১ টাকা। গত দুই বছরে খাদ্যপণ্যের দাম বেড়েছে। গত ফেব্রুয়ারি মাসে মাথাপিছু খাবার কেনার খরচ বেড়ে হয়েছে দুই হাজার ৯২৩ টাকা; যা দুই বছর আগের তুলনায় ৫৮ শতাংশ বেশি।

সরকারি ও বেসরকারি হিসাব বলছে, গত দুই বছরে দেশের মানুষের আয় বাড়লেও এই সময়ে ধারাবাহিকভাবে মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের আশপাশে থেকেছে। সামগ্রিকভাবে দেশের প্রধান খাদ্যগুলোর দাম বেড়েছে।

গত ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশের ১৭ শতাংশ মানুষ খাদ্যঝুঁকিতে ছিল; যা এর আগের মাসের তুলনায় ২ শতাংশ বেড়েছে। ২২ শতাংশ মানুষ স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা বাবদ খরচ কমিয়েছে। আর ১৩ শতাংশ মানুষ সঞ্চয় ভাঙছে। খাদ্যঝুঁকিতে থাকা মাত্র ২১ শতাংশ মানুষ বাইরে থেকে সহায়তা পাচ্ছে।

টানা চতুর্থ মাসের মতো ফেব্রুয়ারি মাসজুড়ে দেশে চালের দাম বেড়েছে। আমনে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৬ শতাংশ বেশি উৎপাদন হওয়া সত্ত্বেও দাম বেড়েছে। উৎপাদন বেশি হওয়া সত্ত্বেও চালের দাম বেশি হওয়ার কারণ হিসেবে চালকল মালিকেরা উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়াকে দায়ী করেছেন।

আন্তর্জাতিক বাজারে ছয় মাস ধরে গমের দাম ধারাবাহিকভাবে কমছে। ফলে বাংলাদেশেও গমের আমদানি বেড়েছে। তবে আমদানির তুলনায় গমের দাম কমেনি।

Tag :
About Author Information

জনপ্রিয় সংবাদ

আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি রয়েছে সৌম্যর সরকারের মধ্যে

বিজ্ঞাপনের নামে ৬ লাখ টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগে অনলাইন টিভির বিরুদ্ধে ব্যবসায়ীদের মানববন্ধন

আয় ও ব‍্যয়ের সাথে তাল মেলাতে পারছেনা দেশের ৬৮ শতাংশ মানুষ

আপডেট টাইম : ০৮:২৩:২৪ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৯ মে ২০২৪

বাংলাদেশে খাদ্য ব্যবস্থাপনা বহুমুখী সমস্যার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। দেশের প্রধান খাদ্যগুলোর দাম বেড়েছে। বিশেষ করে চাল, আটা ও আমিষের প্রধান উৎস মুরগির মাংস, ডিম, মাছ ও সবজির দাম বাড়তির দিকে। বেড়েছে আলু, পেঁয়াজ, আদা, কাঁচা মরিচ ও ফলের দামও।
বর্তমানে দেশের প্রত্যেক অঞ্চলেই নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোতে শুরু হয়েছে ‘বোবা কান্না’। বিশেষ করে লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়ে চলা দ্রব্যমূল্যের কারণে ক্ষোভে ফুঁসছেন নিম্ন ও মধ‍্যম আয়ের সাধারণ মানুষ। সামনের দিনগুলোতে এ দ্রব্যমূল্যের লাগাম টেনে না ধরলে নিম্ন ও মধ্যবিত্তের কান্না শেষ পর্যন্ত ক্ষোভের উদ্গীরণে রূপ নিতে পারে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণে সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময় ব্যবস্থা নিলেও পুরোপুরি সুফল ভোগ করতে পারছে না সাধারণ মানুষ । তবে দেখা যাচ্ছে না কালোবাজারি ঠেকানোর কার্যক্রম। অপ্রত্যাশিত এমন মূল্য বৃদ্ধি এ দেশে নতুন নয়। প্রতিদিন সকালে বাজারে ঢুকেই এ দেশের মানুষ জানতে পারে মূল্য বৃদ্ধির খবর। অথচ বিশ্বের যে কোনো দেশের ক্ষেত্রে জনগণকে জানিয়ে এমনটি ঘটলে জনগণ তাৎক্ষণিকভাবে ক্ষুব্ধ হয়ে পড়ে। ফলে জনসাধারণের কাছে সরকারকে জবাবদিহি করতে হয়। আর বাংলাদেশে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি যেন সাধারণ মানুষের নিত্যদিনের সঙ্গী। এর পেছনে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী পণ্যের দাম বাড়ানোর মতো খারাপ কাজটি করছে। আন্ডারগ্রাউন্ডে বসে থাকা এই শ্রেণির সবাই দাম নিয়ন্ত্রণ করছে। নীতিজ্ঞানহীন বিবেকশূন্য এক সম্প্রদায় এসব সমস্যায় ঘোলা পানিতে মাছ শিকারে তৎপর। তারা কখনো কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করছে, কখনো বা চোরাকারবারের মাধ্যমে সেই কৃত্রিম সংকটের শূন্যতা পূর্ণ করছে। পাশাপাশি জনসাধারণের ক্রয়ক্ষমতাও হ্রাস পাচ্ছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি। কেননা, গড়পড়তা আয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্য একটি বাজার ব্যবস্থা যে কোনো দেশের সরকারের কাছে তার জনগণের প্রাণের দাবি। দ্রব্যমূল্যের এ ঊর্ধ্বগতি থেকে পরিত্রাণের জন্য সরকারি ও বেসরকারি অভিজ্ঞ মহলের সুদৃষ্টি অবশ্যই থাকা প্রয়োজন। অন্তত চারটি ডাল-ভাত খেয়ে দুধে ভাতে বাঁচতে দেওয়া উচিত নিম্ন ও মধ‍্য আয়ের মানুষদেরকে।
বাহার ঊদ্দীন নামে এক চাকরিজীবি বলেন, তেল গ্যাস থেকে শুরু করে নিত্যপ্রয়োজনীয় সব পণ্যের দাম শুধু বাড়ছে আর বাড়ছে। সাধারণ মানুষ অসাধারণ হতে পারছে না বলে তাদের কষ্টের সীমা নেই। নুন আনতে পান্তা ফুরায় – প্রবাদটি আজ চরম সত্য হয়ে ঘাড়ে বসেছে।

এমন পরিস্থিতিতে দেশের ৬৮ শতাংশ মানুষ জীবনযাত্রার ব্যয় কমিয়ে টিকে থাকার চেষ্টা করছে। আর ৪৩ শতাংশ মানুষ বাকিতে খাবার কিনছে। বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডব্লিউএফপি) গত মাসে বাংলাদেশে খাদ্যের দাম বেড়ে যাওয়ার প্রভাব নিয়ে করা গবেষণা প্রতিবেদনে এই তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২২ সালে দেশের দারিদ্র্যসীমার নিচে থাকা মানুষের খাবার কেনার খরচ ছিল প্রতি মাসে মাথাপিছু ১ হাজার ৮৫১ টাকা। গত দুই বছরে খাদ্যপণ্যের দাম বেড়েছে। গত ফেব্রুয়ারি মাসে মাথাপিছু খাবার কেনার খরচ বেড়ে হয়েছে দুই হাজার ৯২৩ টাকা; যা দুই বছর আগের তুলনায় ৫৮ শতাংশ বেশি।

সরকারি ও বেসরকারি হিসাব বলছে, গত দুই বছরে দেশের মানুষের আয় বাড়লেও এই সময়ে ধারাবাহিকভাবে মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের আশপাশে থেকেছে। সামগ্রিকভাবে দেশের প্রধান খাদ্যগুলোর দাম বেড়েছে।

গত ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশের ১৭ শতাংশ মানুষ খাদ্যঝুঁকিতে ছিল; যা এর আগের মাসের তুলনায় ২ শতাংশ বেড়েছে। ২২ শতাংশ মানুষ স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা বাবদ খরচ কমিয়েছে। আর ১৩ শতাংশ মানুষ সঞ্চয় ভাঙছে। খাদ্যঝুঁকিতে থাকা মাত্র ২১ শতাংশ মানুষ বাইরে থেকে সহায়তা পাচ্ছে।

টানা চতুর্থ মাসের মতো ফেব্রুয়ারি মাসজুড়ে দেশে চালের দাম বেড়েছে। আমনে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৬ শতাংশ বেশি উৎপাদন হওয়া সত্ত্বেও দাম বেড়েছে। উৎপাদন বেশি হওয়া সত্ত্বেও চালের দাম বেশি হওয়ার কারণ হিসেবে চালকল মালিকেরা উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়াকে দায়ী করেছেন।

আন্তর্জাতিক বাজারে ছয় মাস ধরে গমের দাম ধারাবাহিকভাবে কমছে। ফলে বাংলাদেশেও গমের আমদানি বেড়েছে। তবে আমদানির তুলনায় গমের দাম কমেনি।