০১:৩৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫

হাইফা বন্দরে ইরাক ও ইয়েমেনের যৌথ হামলা

  • পার্সটুডে
  • আপডেট টাইম : ১১:২৮:৪৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৭ জুন ২০২৪
  • ২১ বার পঠিত

ইয়েমেনের জনপ্রিয় আনসারুল্লাহ আন্দোলনের নেতৃত্বাধীন সরকারের সশস্ত্র বাহিনী ও ইরাকের ইসলামী প্রতিরোধ যোদ্ধারা অধিকৃত ফিলিস্তিনের ভূমধ্য সাগর সংলগ্ন হাইফা বন্দরে ইসরাইল-বিরোধী দুটি যৌথ অভিযান চালিয়েছে।
এই যৌথ অভিযানে বেশ কয়েকটি ড্রোন ব্যবহার করা হয়েছে। গাজার রাফাহ শহরে সাম্প্রতিক ইসরাইলি গণহত্যার জবাবে এসব হামলা চালিয়েছে ইয়েমেন ও ইরাকের প্রতিরোধ যোদ্ধারা। গাজার ওপর ইসরাইলি আগ্রাসন ও অবরোধ তুলে না নেয়া পর্যন্ত এ ধরনের আরও যৌথ অভিযান চালানো হবে বলে এই সম্মিলিত প্রতিরোধ সূত্র হুঁশিয়ারি দিয়েছে।
এ দুটি অভিযান রণাঙ্গনে ইসরাইল বিরোধী প্রতিরোধ ফ্রন্টের ঐক্য ও সমন্বয়ের এবং তাদের বহুমুখী বা বিচিত্রময় হামলার চমৎকার দৃষ্টান্ত। অধিকৃত ফিলিস্তিনের সঙ্গে ইরাক ও ইয়েমেনের অভিন্ন স্থল-সীমান্ত নেই যেমনটি রয়েছে ফিলিস্তিনি, লেবাননি ও সিরিয় প্রতিরোধ যোদ্ধাদের। তাই সাগরে ও আকাশ-পথে ইসরাইলের গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্যবস্তুগুলোতে আক্রমণ তথা ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলাই আপাতত তাদের কর্মপন্থা। এইসব হামলা বা প্রতিরোধ না থাকলে ইসরাইল গাজার মজলুম ফিলিস্তিনিদের ওপর হামলা আরও তীব্র করত এবং গাজায় যুদ্ধের আরও বিস্তার ঘটিয়ে এতদিনে গাজাবাসীকে মিশরের সিনাইয়ের দিকে চলে যেতে বাধ্য করার পদক্ষেপ নিত।
অপ্রচলিত ও গেরিলা যুদ্ধের নানা কৌশল প্রয়োগ করে ইসরাইলের ও তার মিত্রদের বিশেষ করে মার্কিন সরকারের প্রথাগত বাহিনীর ওপর হামলার নীতি তথা আগ্রাসী-চক্রের নানা দুর্বলতা সনাক্ত করে স্থান ও সময় আর পরিস্থিতির আলোকে পর্যায়ক্রমে প্রতিরোধমূলক হামলা জোরদারের নীতি বেশ গুরুত্বপূর্ণ। ইসরাইলি অপরাধযজ্ঞ তীব্রতর হওয়ার প্রেক্ষাপটে পাল্টা ব্যবস্থার এই কৌশল বেশ কার্যকর হতে পারে। এ ছাড়াও অন্যান্য ব্যবস্থা এবং ব্যাপক ও সর্বাত্মক যুদ্ধ শুরু করারও অবকাশ তথা সুযোগ রয়েছে।
ইসরাইলি লক্ষ্যবস্তুগুলোতে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালানোর পাশাপাশি ইসরাইলগামী ও ইসরাইল-সম্পর্কিত এবং ইসরাইলের মিত্র ইঙ্গ-মার্কিন শক্তির জাহাজগুলোতে হামলা চালিয়ে ইয়েমেন প্রতিরোধ অক্ষের অন্যতম প্রধান বা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শক্তিতে পরিণত হয়েছে। এইসব প্রতিরোধের কারণে ইসরাইলের এইলাত বন্দরটি কার্যত অচল হয়ে পড়েছে যা ছিল পূর্ব এশিয়ার সঙ্গে ইসরাইলের যোগাযোগের এবং তেলআবিবের জন্য সুয়েজ খালের বিকল্প যোগাযোগের মাধ্যম।
পূর্ব এশিয়া থেকে ইসরাইলে বছরে প্রায় ৯ হাজার ৫০০ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি করা হয়। ইয়েমেনের প্রতিরোধ যোদ্ধারা ইসরাইলগামী জাহাজগুলোর জন্য বাব আল মান্দেব প্রণালী বন্ধ করে দেয়ায় আফ্রিকার উপকূলীয় অঞ্চল ঘুরে ইসরাইলে মালামাল পাঠাতে চার থেকে পাঁচ সপ্তাহ বেশি সময় লাগে। ফলে ওইসব পণ্য আমদানির পেছনে ইসরাইলকে পরিশোধ করতে হচ্ছে তিন শতাংশ বাড়তি মূল্য যা প্রায় ৩০০ কোটি ডলারের সমান। ইসরাইল তার আমদানি করা পণ্যের ৯৯ শতাংশই আমদানি করে সাগর পথে এবং এর শতকরা ত্রিশ ভাগই আনা হয় লোহিত সাগর দিয়ে। ইসরাইলের একজন উচ্চপদস্থ গোয়েন্দা কর্মকর্তা স্বীকার করেছে যে লোহিত সাগরের উপকূল ধরে ইয়েমেনের বিশাল অঞ্চল এবং তার ড্রোন, ক্ষেপণাস্ত্র ও অন্তত এক লাখ যোদ্ধা ইসরাইলের জন্য ব্যাপক বিধ্বংসী অস্ত্র ও হুমকির শামিল।
অন্যদিকে ইরাকি প্রতিরোধ যোদ্ধারাও আল-আকসা তুফান নামক ফিলিস্তিনের ইসরাইল বিরোধী অভিযান শুরুর প্রায় পরপরই ফিলিস্তিনিদের প্রতি সহায়তা দিতে সামরিক অভিযান শুরু করেছে। ইরাক ও সিরিয়ায় মার্কিন ঘাঁটিগুলোতে তারা এ পর্যন্ত ১০০’রও বেশি অভিযান চালিয়েছে। এ ছাড়াও ইরাকের ইসলামী প্রতিরোধ শক্তি এইলাত বন্দর সংলগ্ন লোহিত সাগরের অঞ্চলগুলোসহ ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে ইসরাইলের কারিশ গ্যাস ক্ষেত্রে ক্রমেই অভিযান জোরদার করেছে। এসব অঞ্চলে তারা ব্যবহার করেছে ৪০০ কিলোমিটার পাল্লার নানা ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন।
ওদিকে লেবাননের প্রতিরোধ যোদ্ধারাও গত বছরের আট অক্টোবর থেকে বিভিন্ন ধরনের ধ্বংসাত্মক হামলা চালিয়ে ইসরাইলি সামরিক শক্তির, বিশেষ করে স্থল ও বিমান শক্তির এক বড় অংশকেই উত্তর ইসরাইলে মোতায়েন রাখতে বাধ্য করেছে। এ অঞ্চলে বসতি স্থাপনকারী প্রায় এক লাখ ইসরাইলি অন্যত্র চলে যেতে বাধ্য হওয়ায় ইসরাইল ব্যাপক অর্থনৈতিক ক্ষয়ক্ষতিরও শিকার হয়েছে। তাই এটা স্পষ্ট হাইফা বন্দরে ইরাক ও ইয়েমেনের প্রতিরোধ যোদ্ধাদের সম্মিলিত হামলা গাজার রাফাহয় যুদ্ধ অব্যাহত রাখার বিরুদ্ধে ইসরাইল ও তার সহযোগীদের প্রতি বড় ধরনের চাপ ও সতর্ক-বার্তা।

Tag :
About Author Information

জনপ্রিয় সংবাদ

আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি রয়েছে সৌম্যর সরকারের মধ্যে

বিজ্ঞাপনের নামে ৬ লাখ টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগে অনলাইন টিভির বিরুদ্ধে ব্যবসায়ীদের মানববন্ধন

হাইফা বন্দরে ইরাক ও ইয়েমেনের যৌথ হামলা

আপডেট টাইম : ১১:২৮:৪৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৭ জুন ২০২৪

ইয়েমেনের জনপ্রিয় আনসারুল্লাহ আন্দোলনের নেতৃত্বাধীন সরকারের সশস্ত্র বাহিনী ও ইরাকের ইসলামী প্রতিরোধ যোদ্ধারা অধিকৃত ফিলিস্তিনের ভূমধ্য সাগর সংলগ্ন হাইফা বন্দরে ইসরাইল-বিরোধী দুটি যৌথ অভিযান চালিয়েছে।
এই যৌথ অভিযানে বেশ কয়েকটি ড্রোন ব্যবহার করা হয়েছে। গাজার রাফাহ শহরে সাম্প্রতিক ইসরাইলি গণহত্যার জবাবে এসব হামলা চালিয়েছে ইয়েমেন ও ইরাকের প্রতিরোধ যোদ্ধারা। গাজার ওপর ইসরাইলি আগ্রাসন ও অবরোধ তুলে না নেয়া পর্যন্ত এ ধরনের আরও যৌথ অভিযান চালানো হবে বলে এই সম্মিলিত প্রতিরোধ সূত্র হুঁশিয়ারি দিয়েছে।
এ দুটি অভিযান রণাঙ্গনে ইসরাইল বিরোধী প্রতিরোধ ফ্রন্টের ঐক্য ও সমন্বয়ের এবং তাদের বহুমুখী বা বিচিত্রময় হামলার চমৎকার দৃষ্টান্ত। অধিকৃত ফিলিস্তিনের সঙ্গে ইরাক ও ইয়েমেনের অভিন্ন স্থল-সীমান্ত নেই যেমনটি রয়েছে ফিলিস্তিনি, লেবাননি ও সিরিয় প্রতিরোধ যোদ্ধাদের। তাই সাগরে ও আকাশ-পথে ইসরাইলের গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্যবস্তুগুলোতে আক্রমণ তথা ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলাই আপাতত তাদের কর্মপন্থা। এইসব হামলা বা প্রতিরোধ না থাকলে ইসরাইল গাজার মজলুম ফিলিস্তিনিদের ওপর হামলা আরও তীব্র করত এবং গাজায় যুদ্ধের আরও বিস্তার ঘটিয়ে এতদিনে গাজাবাসীকে মিশরের সিনাইয়ের দিকে চলে যেতে বাধ্য করার পদক্ষেপ নিত।
অপ্রচলিত ও গেরিলা যুদ্ধের নানা কৌশল প্রয়োগ করে ইসরাইলের ও তার মিত্রদের বিশেষ করে মার্কিন সরকারের প্রথাগত বাহিনীর ওপর হামলার নীতি তথা আগ্রাসী-চক্রের নানা দুর্বলতা সনাক্ত করে স্থান ও সময় আর পরিস্থিতির আলোকে পর্যায়ক্রমে প্রতিরোধমূলক হামলা জোরদারের নীতি বেশ গুরুত্বপূর্ণ। ইসরাইলি অপরাধযজ্ঞ তীব্রতর হওয়ার প্রেক্ষাপটে পাল্টা ব্যবস্থার এই কৌশল বেশ কার্যকর হতে পারে। এ ছাড়াও অন্যান্য ব্যবস্থা এবং ব্যাপক ও সর্বাত্মক যুদ্ধ শুরু করারও অবকাশ তথা সুযোগ রয়েছে।
ইসরাইলি লক্ষ্যবস্তুগুলোতে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালানোর পাশাপাশি ইসরাইলগামী ও ইসরাইল-সম্পর্কিত এবং ইসরাইলের মিত্র ইঙ্গ-মার্কিন শক্তির জাহাজগুলোতে হামলা চালিয়ে ইয়েমেন প্রতিরোধ অক্ষের অন্যতম প্রধান বা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শক্তিতে পরিণত হয়েছে। এইসব প্রতিরোধের কারণে ইসরাইলের এইলাত বন্দরটি কার্যত অচল হয়ে পড়েছে যা ছিল পূর্ব এশিয়ার সঙ্গে ইসরাইলের যোগাযোগের এবং তেলআবিবের জন্য সুয়েজ খালের বিকল্প যোগাযোগের মাধ্যম।
পূর্ব এশিয়া থেকে ইসরাইলে বছরে প্রায় ৯ হাজার ৫০০ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি করা হয়। ইয়েমেনের প্রতিরোধ যোদ্ধারা ইসরাইলগামী জাহাজগুলোর জন্য বাব আল মান্দেব প্রণালী বন্ধ করে দেয়ায় আফ্রিকার উপকূলীয় অঞ্চল ঘুরে ইসরাইলে মালামাল পাঠাতে চার থেকে পাঁচ সপ্তাহ বেশি সময় লাগে। ফলে ওইসব পণ্য আমদানির পেছনে ইসরাইলকে পরিশোধ করতে হচ্ছে তিন শতাংশ বাড়তি মূল্য যা প্রায় ৩০০ কোটি ডলারের সমান। ইসরাইল তার আমদানি করা পণ্যের ৯৯ শতাংশই আমদানি করে সাগর পথে এবং এর শতকরা ত্রিশ ভাগই আনা হয় লোহিত সাগর দিয়ে। ইসরাইলের একজন উচ্চপদস্থ গোয়েন্দা কর্মকর্তা স্বীকার করেছে যে লোহিত সাগরের উপকূল ধরে ইয়েমেনের বিশাল অঞ্চল এবং তার ড্রোন, ক্ষেপণাস্ত্র ও অন্তত এক লাখ যোদ্ধা ইসরাইলের জন্য ব্যাপক বিধ্বংসী অস্ত্র ও হুমকির শামিল।
অন্যদিকে ইরাকি প্রতিরোধ যোদ্ধারাও আল-আকসা তুফান নামক ফিলিস্তিনের ইসরাইল বিরোধী অভিযান শুরুর প্রায় পরপরই ফিলিস্তিনিদের প্রতি সহায়তা দিতে সামরিক অভিযান শুরু করেছে। ইরাক ও সিরিয়ায় মার্কিন ঘাঁটিগুলোতে তারা এ পর্যন্ত ১০০’রও বেশি অভিযান চালিয়েছে। এ ছাড়াও ইরাকের ইসলামী প্রতিরোধ শক্তি এইলাত বন্দর সংলগ্ন লোহিত সাগরের অঞ্চলগুলোসহ ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে ইসরাইলের কারিশ গ্যাস ক্ষেত্রে ক্রমেই অভিযান জোরদার করেছে। এসব অঞ্চলে তারা ব্যবহার করেছে ৪০০ কিলোমিটার পাল্লার নানা ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন।
ওদিকে লেবাননের প্রতিরোধ যোদ্ধারাও গত বছরের আট অক্টোবর থেকে বিভিন্ন ধরনের ধ্বংসাত্মক হামলা চালিয়ে ইসরাইলি সামরিক শক্তির, বিশেষ করে স্থল ও বিমান শক্তির এক বড় অংশকেই উত্তর ইসরাইলে মোতায়েন রাখতে বাধ্য করেছে। এ অঞ্চলে বসতি স্থাপনকারী প্রায় এক লাখ ইসরাইলি অন্যত্র চলে যেতে বাধ্য হওয়ায় ইসরাইল ব্যাপক অর্থনৈতিক ক্ষয়ক্ষতিরও শিকার হয়েছে। তাই এটা স্পষ্ট হাইফা বন্দরে ইরাক ও ইয়েমেনের প্রতিরোধ যোদ্ধাদের সম্মিলিত হামলা গাজার রাফাহয় যুদ্ধ অব্যাহত রাখার বিরুদ্ধে ইসরাইল ও তার সহযোগীদের প্রতি বড় ধরনের চাপ ও সতর্ক-বার্তা।