০৩:৫৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ২০ মে ২০২৪

ধূমপান দেহের কী কী ক্ষতি করে?

ধূমপান দেহের কী কী ক্ষতি করে?

ধূমপান মানেই বিষপান, কথাটির সঙ্গে আপনি নিশ্চয়ই অনেকটাই পরিচিত। তবে কথাটিকে সঠিকভাবে উপলব্দি করে ধূমপান ছাড়তে দেখা যায় অল্প মানুষকেই। ধূমপানের ক্ষতি কেবল মানব দেহেই পড়ে না, এর প্রভাব পড়ে সমাজ ও পরিবার এর উপর ও।

সাধারণত ধূমপান করলে মানব দেহে কী ধরনের ক্ষতি হয় এবং এটি ছাড়ার উপায় জানিয়েছে ডাক্তার মোহাম্মদ আবদুর রহিম। বর্তমানে তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ইন্টারন্যাল মেডিসিন বিভাগে অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত।

প্রশ্ন : প্রথমত ধূমপানের ক্ষতিকর প্রভাবগুলো কী?

উত্তর: ধূমপান আসলেই একটি মরণ ব্যাধি। এটি সত্যিকার অর্থে একটি সামাজিক ও শারীরিক ব্যাধি। ধূমপান অনেক সামাজিক বিপর্যয় কারন হয়ে দাঁড়ায়। আমরা একটু পথে-ঘাটে তাকালে দেখব, অসংখ্য মানুষ জলন্ত সিগারেট হাতে নিয়ে ঘুরছে হরহামেশাই। এটি একটি ভয়াবহ দিক। তবে যারা এ রকম করছে, তাদের কাছে এটি বড় কোনো বিষয় মনে হয় না। তারা এটিকে স্বাভাবিক একটি ব্যাপার মনে করে থাকে। মনে করে, এটি কোনো ব্যাপারই নয়। এটি আসলেই খুব জঘন্য একটি বিষয়। এর প্রভাব খুবই মারাত্মক হতে পারে।

তবে এ বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে, আমি একটি কবিতার লাইন আমার মনে পরে যায়। “জ্বলন্ত সিগারেটে জ্বলে এ জীবন,/বুঝতে পারে না তবু প্রতারিত মন,/ধূমপানে পরিশেষে ঘনায় মরণ, তবু কেন ধূমপান চলে আজীবন?”

সাধারণত ধূমপানের প্রভাব কীভাবে বিস্তার হয় বলি। ধূমপানের ফলে তো অনেক ধোঁয়া বের হয়। চলাফেরার সময় এই যে ধোঁয়া বের হয়, এটি কিন্তু অনেক মানুষ সইতে পারে না। ধূমপানের ধোঁয়ার কাছে আসলে তার কাশি শুরু হয়ে যায়।

ধোঁয়ায় কিন্তু অনেক বিষাক্ত পদার্থ রয়েছে। এর মধ্যে একটি হলো, নিকোটিন। এ ছাড়া অসংখ্য বিষাক্ত পদার্থ রয়েছে। অনেক মানুষ কিন্তু এই ধোঁয়ায় বিরক্ত হয়। তবে যারা ধূমপান করে তারা বিষয়টিকে গুরুত্ব দেয় না।

যারা ধূমপান করে না তারা মনে করে, আমি তো ভালোই আছি। কিন্তু ধূমপায়ীর আশপাশে থাকার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত সবাই হচ্ছে। পরোক্ষ ধূমপানে কারণে সমস্যা হয়। যারা ধূমপান করে তাদের তো অনেক ক্ষতি হয়। তবে যারা ধূমপান করে না, তারাও এই পরিবেশের কারণে, ধোঁয়ায় কারণে পরোক্ষভাবে আক্রান্ত হচ্ছে। এটি তো পথে-ঘাটের ব্যাপার। তবে যারা বাড়িতে ধূমপান করে, যাদের ছোট শিশু তারাও কিন্তু আক্রান্ত হয়ে যায়। যারা বাড়িতে ধূমপান করছে তাদের কারণে কিন্তু ঘরের ছোট শিশুটি নিউমোনিয়া, ব্রঙ্কাইটিসে আক্রান্ত হতে পারে। এমনকি মারাও যেতে পারে। এ বিষয়টি মানুষের জানা নেই। মানুষ বোঝে না। ধূমপান করাকে অনেকে ঐতিহ্য মনে করে। অনেকে অন্যকে প্ররোচিতও করে ধূমপান করার জন্য। এই মানসিকতার পরিবর্তন দরকার।

প্রশ্ন : কীভাবে এটি প্রতিকার করা যায়?

উত্তর: ধূমপানের মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব রয়েছে। যেমন ধরুন, অনেকে জানে, ধূমপান করলে বিভিন্ন ক্যানসার হতে পারে, বিশেষ করে ফুসফুসের ক্যানসার। মানুষ বিষয়টি জানে। অন্যান্য ক্যানসারও হতে পারে। তবে আরো মারাত্মক যেটি, ধূমপান করলে আমাদের শরীরের যে রক্তনালি সেটি সরু হয়ে যায়। সরু হয়ে গেলে পরে বিভিন্ন জটিলতা হয়। হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোকের ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়। তাই যারা ধূমপান করে তারা যদি মনে করে এই সমস্ত জটিলতায় আমার ক্ষতি হতে পারে, তাহলে উনি ধূমপান থেকে বিরত থাকতে পারবেন।

প্রশ্ন : এছাড়াও ক্রনিক অবসট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ (সিওপিডি) কিন্তু এ কারণে হয়। এ ধরনের রোগ কিন্তু মানুষকে মৃত্যুর দিকে নিয়ে যায়। তাই ধূমপানের ক্ষতিকর বিষয়গুলো জানানো প্রয়োজন। এ বিষয়ে আপনার পরামর্শ কী?

উত্তর : এটা আসলে একটি মারাত্মক রোগ। এটি হলে রোগী আর ফিরে আসতে পারে না। আর ধূমপানের একটি বিশেষ ভূমিকা রয়েছে এই রোগ হওয়ার ক্ষেত্রে।

আসলে আমরা যখন রোগীদের উপদেশ দিই, তখন সবাই এটা মানতে চায় না। আবার অনেকেই সহজে মেনে নেয়। আবার দেখা যায়, অনেকে রোগীকে ধূমপান থেকে বিরত থাকতে বলেছে, তারপরও সে ছাড়ছে না। ধূমপানের মধ্যে মাদকতা রয়েছে। এটি একটি আসক্তি। আবার অভ্যাসের বিষয়ও রয়েছে। অনেকে অভ্যাসবশত এটি করেন।

মূল কথা হলো, ধূমপান কীভাবে ছাড়তে পারবে। মানুষ যদি দৃঢ়ভাবে প্রতিজ্ঞা করে, আমি ধূমপান পরিহার করবো, তাহলে এটিই যথেষ্ট। কিন্তু আমরা যেটি দেখি, আসলে মানুষ বলার জন্যই বলে। তবে বাস্তবেই যদি কেউ হৃদয় থেকে বলে যে আমি ধূমপান ছেড়ে দেব, তাহলে সে অবশ্যই পারবে। এটা কোনো জটিল বিষয় নয়। তবে তার মানসিক প্রস্তুতিই থাকে না।

প্রশ্ন: কিভাবে এই মানসিক প্রস্তুতি নেওয়া উচিত বলে মনে করেন? আবার ধরুন, ধূমপান করবে না চিন্তা করল, তবে কোনো একটি মানসিক চাপযুক্ত পরিস্থিতি এলো, সে হয়তো একটি কাঠি ধরিয়ে ধূমপান শুরু করে দিল। এ বিষয়ে আপনার পরামর্শ কী?

উত্তর: আসলে আমাদের জীবনে অনেক মানসিক চাপে থাকি। তবে এখন কথা হলো, ধূমপান তো সবাই করে না। যারা করে তারা হয়তো বিশেষভাবে পরিবর্তিত হয়ে যায়, মনে করে ধূমপান করলে মানসিক চাপ থেকে বাঁচতে পারবে। এটি হলো অবাস্তব চিন্তা। এটা তো তাকে বুঝতে হবে যে কীভাবে পরিহার করতে পারি। মানসিক চাপযুক্ত সময় যখন আসে, ধূমপান ছাড়া অন্য কিছু চিন্তা করতে হবে। অন্য কিছু দিয়ে এই মানসিক চাপযুক্ত অবস্থা অতিক্রম করা যায় কি না ভাবতে হবে।

এ ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া যেতে পারে। আবার তিনি হয়তো চুইঙ্গাম খেতে পারে, চকোলেট খেতে পারে।

প্রশ্ন : অন্য ক্ষতিকর প্রভাবগুলো কী?

উত্তর: আমি কিছু পারিবারিক প্রভাবের কথা বলছি। সামাজিক, পারিবারিক দুটোই বলতে পারেন। যারা ধূমপান করেন, তাদের নিশ্বাসের স্বাভাবিক অবস্থা কিন্তু থাকে না। যারা ধূমপান করেন তাদের নিশ্বাসে একটি বাজে গন্ধ থাকে। তো তার যে সঙ্গী সে হয়তো তার সহচার্যই ছেড়ে দিল। একে পারিবারিক বিপর্যয় বলা যেতে পারে।

যৌন ক্ষমতার ওপর কিন্তু ধূমপানের একটি প্রভাব রয়েছে। যারা অতিরিক্ত ধূমপান করে তাদের কিন্তু এটি মারাত্মক পর্যায়ে চলে যেতে পারে। সাংসারিক, সামাজিক বিপর্যয় তখন হতে পারে।

প্রশ্ন: ব্যায়াম ধূমপান বা যেকোনো আসক্তিকে প্রতিরোধ করতে অনেক সাহায্য করে। সে ক্ষেত্রে আপনার পরামর্শ কী?

উত্তর: যেকোনো আসক্তি থেকে বাঁচতে হলে প্রফুল্ল থাকা অনেক বেশি কাজ করে। ব্যায়ামের বিষয়টি তো রয়েছেই।

আরেকটি বিষয় বলতে চাই। ধূমপানের ক্ষেত্রে কিন্তু একটি ধর্মীয় বিষয়ও রয়েছে। ধর্মীয়ভাবে ধূমপান কিন্তু গ্রহণযোগ্য নয়। যেহেতু বিভিন্ন ক্ষতিকর দিক রয়েছে।

প্রশ্ন: যখন মানুষ ধূমপান করে তখন অন্য মানুষদের কী ক্ষতি হতে পারে?

উত্তর: একজন মানুষ হয়তো বিষয়টি পছন্দ করে না, তার তো খারাপ লাগতে পারে। তার কাশি হতে পারে, শ্বাসকষ্ট হতে পারে। শেষ পর্যন্ত তো বিভিন্ন রোগের সৃষ্টি হতেই পারে।

আবার অনেক সময় কেউ ধূমপান করল, অন্য কেউ প্রতিবাদ করলো, এর মধ্যে কিন্তু একটি দ্বন্দ্ব তৈরি হয়ে যেতে পারে।

প্রশ্ন: সর্বশেষ আপনার পরামর্শ কী?

উত্তর: সুস্থ জীবন যাপন করতে হলে, ধূমপান পরিহার করতে হবে। বুঝতে হবে, ধূমপান কেবল নিজের ক্ষতি নয়, নিজের সন্তানদের ক্ষতি। আর নিজের জীবন বিপন্ন হয়ে গেলে তো পরিবারের অন্যান্য লোকের জীবনও বিপন্ন হয়ে যাবে। আর তাই ধূমপান এখন থেকেই বন্ধ করতে হবে।

About Author Information

জনপ্রিয় সংবাদ

আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি রয়েছে সৌম্যর সরকারের মধ্যে

চসিকের উচ্ছেদকৃত পাঁচলাইশে সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্পের নির্মিত সেই দোকানগুলো পুনরায় চালুর পায়তারা

ধূমপান দেহের কী কী ক্ষতি করে?

আপডেট টাইম : ১১:৩৯:২৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৩ এপ্রিল ২০২২

ধূমপান মানেই বিষপান, কথাটির সঙ্গে আপনি নিশ্চয়ই অনেকটাই পরিচিত। তবে কথাটিকে সঠিকভাবে উপলব্দি করে ধূমপান ছাড়তে দেখা যায় অল্প মানুষকেই। ধূমপানের ক্ষতি কেবল মানব দেহেই পড়ে না, এর প্রভাব পড়ে সমাজ ও পরিবার এর উপর ও।

সাধারণত ধূমপান করলে মানব দেহে কী ধরনের ক্ষতি হয় এবং এটি ছাড়ার উপায় জানিয়েছে ডাক্তার মোহাম্মদ আবদুর রহিম। বর্তমানে তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ইন্টারন্যাল মেডিসিন বিভাগে অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত।

প্রশ্ন : প্রথমত ধূমপানের ক্ষতিকর প্রভাবগুলো কী?

উত্তর: ধূমপান আসলেই একটি মরণ ব্যাধি। এটি সত্যিকার অর্থে একটি সামাজিক ও শারীরিক ব্যাধি। ধূমপান অনেক সামাজিক বিপর্যয় কারন হয়ে দাঁড়ায়। আমরা একটু পথে-ঘাটে তাকালে দেখব, অসংখ্য মানুষ জলন্ত সিগারেট হাতে নিয়ে ঘুরছে হরহামেশাই। এটি একটি ভয়াবহ দিক। তবে যারা এ রকম করছে, তাদের কাছে এটি বড় কোনো বিষয় মনে হয় না। তারা এটিকে স্বাভাবিক একটি ব্যাপার মনে করে থাকে। মনে করে, এটি কোনো ব্যাপারই নয়। এটি আসলেই খুব জঘন্য একটি বিষয়। এর প্রভাব খুবই মারাত্মক হতে পারে।

তবে এ বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে, আমি একটি কবিতার লাইন আমার মনে পরে যায়। “জ্বলন্ত সিগারেটে জ্বলে এ জীবন,/বুঝতে পারে না তবু প্রতারিত মন,/ধূমপানে পরিশেষে ঘনায় মরণ, তবু কেন ধূমপান চলে আজীবন?”

সাধারণত ধূমপানের প্রভাব কীভাবে বিস্তার হয় বলি। ধূমপানের ফলে তো অনেক ধোঁয়া বের হয়। চলাফেরার সময় এই যে ধোঁয়া বের হয়, এটি কিন্তু অনেক মানুষ সইতে পারে না। ধূমপানের ধোঁয়ার কাছে আসলে তার কাশি শুরু হয়ে যায়।

ধোঁয়ায় কিন্তু অনেক বিষাক্ত পদার্থ রয়েছে। এর মধ্যে একটি হলো, নিকোটিন। এ ছাড়া অসংখ্য বিষাক্ত পদার্থ রয়েছে। অনেক মানুষ কিন্তু এই ধোঁয়ায় বিরক্ত হয়। তবে যারা ধূমপান করে তারা বিষয়টিকে গুরুত্ব দেয় না।

যারা ধূমপান করে না তারা মনে করে, আমি তো ভালোই আছি। কিন্তু ধূমপায়ীর আশপাশে থাকার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত সবাই হচ্ছে। পরোক্ষ ধূমপানে কারণে সমস্যা হয়। যারা ধূমপান করে তাদের তো অনেক ক্ষতি হয়। তবে যারা ধূমপান করে না, তারাও এই পরিবেশের কারণে, ধোঁয়ায় কারণে পরোক্ষভাবে আক্রান্ত হচ্ছে। এটি তো পথে-ঘাটের ব্যাপার। তবে যারা বাড়িতে ধূমপান করে, যাদের ছোট শিশু তারাও কিন্তু আক্রান্ত হয়ে যায়। যারা বাড়িতে ধূমপান করছে তাদের কারণে কিন্তু ঘরের ছোট শিশুটি নিউমোনিয়া, ব্রঙ্কাইটিসে আক্রান্ত হতে পারে। এমনকি মারাও যেতে পারে। এ বিষয়টি মানুষের জানা নেই। মানুষ বোঝে না। ধূমপান করাকে অনেকে ঐতিহ্য মনে করে। অনেকে অন্যকে প্ররোচিতও করে ধূমপান করার জন্য। এই মানসিকতার পরিবর্তন দরকার।

প্রশ্ন : কীভাবে এটি প্রতিকার করা যায়?

উত্তর: ধূমপানের মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব রয়েছে। যেমন ধরুন, অনেকে জানে, ধূমপান করলে বিভিন্ন ক্যানসার হতে পারে, বিশেষ করে ফুসফুসের ক্যানসার। মানুষ বিষয়টি জানে। অন্যান্য ক্যানসারও হতে পারে। তবে আরো মারাত্মক যেটি, ধূমপান করলে আমাদের শরীরের যে রক্তনালি সেটি সরু হয়ে যায়। সরু হয়ে গেলে পরে বিভিন্ন জটিলতা হয়। হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোকের ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়। তাই যারা ধূমপান করে তারা যদি মনে করে এই সমস্ত জটিলতায় আমার ক্ষতি হতে পারে, তাহলে উনি ধূমপান থেকে বিরত থাকতে পারবেন।

প্রশ্ন : এছাড়াও ক্রনিক অবসট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ (সিওপিডি) কিন্তু এ কারণে হয়। এ ধরনের রোগ কিন্তু মানুষকে মৃত্যুর দিকে নিয়ে যায়। তাই ধূমপানের ক্ষতিকর বিষয়গুলো জানানো প্রয়োজন। এ বিষয়ে আপনার পরামর্শ কী?

উত্তর : এটা আসলে একটি মারাত্মক রোগ। এটি হলে রোগী আর ফিরে আসতে পারে না। আর ধূমপানের একটি বিশেষ ভূমিকা রয়েছে এই রোগ হওয়ার ক্ষেত্রে।

আসলে আমরা যখন রোগীদের উপদেশ দিই, তখন সবাই এটা মানতে চায় না। আবার অনেকেই সহজে মেনে নেয়। আবার দেখা যায়, অনেকে রোগীকে ধূমপান থেকে বিরত থাকতে বলেছে, তারপরও সে ছাড়ছে না। ধূমপানের মধ্যে মাদকতা রয়েছে। এটি একটি আসক্তি। আবার অভ্যাসের বিষয়ও রয়েছে। অনেকে অভ্যাসবশত এটি করেন।

মূল কথা হলো, ধূমপান কীভাবে ছাড়তে পারবে। মানুষ যদি দৃঢ়ভাবে প্রতিজ্ঞা করে, আমি ধূমপান পরিহার করবো, তাহলে এটিই যথেষ্ট। কিন্তু আমরা যেটি দেখি, আসলে মানুষ বলার জন্যই বলে। তবে বাস্তবেই যদি কেউ হৃদয় থেকে বলে যে আমি ধূমপান ছেড়ে দেব, তাহলে সে অবশ্যই পারবে। এটা কোনো জটিল বিষয় নয়। তবে তার মানসিক প্রস্তুতিই থাকে না।

প্রশ্ন: কিভাবে এই মানসিক প্রস্তুতি নেওয়া উচিত বলে মনে করেন? আবার ধরুন, ধূমপান করবে না চিন্তা করল, তবে কোনো একটি মানসিক চাপযুক্ত পরিস্থিতি এলো, সে হয়তো একটি কাঠি ধরিয়ে ধূমপান শুরু করে দিল। এ বিষয়ে আপনার পরামর্শ কী?

উত্তর: আসলে আমাদের জীবনে অনেক মানসিক চাপে থাকি। তবে এখন কথা হলো, ধূমপান তো সবাই করে না। যারা করে তারা হয়তো বিশেষভাবে পরিবর্তিত হয়ে যায়, মনে করে ধূমপান করলে মানসিক চাপ থেকে বাঁচতে পারবে। এটি হলো অবাস্তব চিন্তা। এটা তো তাকে বুঝতে হবে যে কীভাবে পরিহার করতে পারি। মানসিক চাপযুক্ত সময় যখন আসে, ধূমপান ছাড়া অন্য কিছু চিন্তা করতে হবে। অন্য কিছু দিয়ে এই মানসিক চাপযুক্ত অবস্থা অতিক্রম করা যায় কি না ভাবতে হবে।

এ ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া যেতে পারে। আবার তিনি হয়তো চুইঙ্গাম খেতে পারে, চকোলেট খেতে পারে।

প্রশ্ন : অন্য ক্ষতিকর প্রভাবগুলো কী?

উত্তর: আমি কিছু পারিবারিক প্রভাবের কথা বলছি। সামাজিক, পারিবারিক দুটোই বলতে পারেন। যারা ধূমপান করেন, তাদের নিশ্বাসের স্বাভাবিক অবস্থা কিন্তু থাকে না। যারা ধূমপান করেন তাদের নিশ্বাসে একটি বাজে গন্ধ থাকে। তো তার যে সঙ্গী সে হয়তো তার সহচার্যই ছেড়ে দিল। একে পারিবারিক বিপর্যয় বলা যেতে পারে।

যৌন ক্ষমতার ওপর কিন্তু ধূমপানের একটি প্রভাব রয়েছে। যারা অতিরিক্ত ধূমপান করে তাদের কিন্তু এটি মারাত্মক পর্যায়ে চলে যেতে পারে। সাংসারিক, সামাজিক বিপর্যয় তখন হতে পারে।

প্রশ্ন: ব্যায়াম ধূমপান বা যেকোনো আসক্তিকে প্রতিরোধ করতে অনেক সাহায্য করে। সে ক্ষেত্রে আপনার পরামর্শ কী?

উত্তর: যেকোনো আসক্তি থেকে বাঁচতে হলে প্রফুল্ল থাকা অনেক বেশি কাজ করে। ব্যায়ামের বিষয়টি তো রয়েছেই।

আরেকটি বিষয় বলতে চাই। ধূমপানের ক্ষেত্রে কিন্তু একটি ধর্মীয় বিষয়ও রয়েছে। ধর্মীয়ভাবে ধূমপান কিন্তু গ্রহণযোগ্য নয়। যেহেতু বিভিন্ন ক্ষতিকর দিক রয়েছে।

প্রশ্ন: যখন মানুষ ধূমপান করে তখন অন্য মানুষদের কী ক্ষতি হতে পারে?

উত্তর: একজন মানুষ হয়তো বিষয়টি পছন্দ করে না, তার তো খারাপ লাগতে পারে। তার কাশি হতে পারে, শ্বাসকষ্ট হতে পারে। শেষ পর্যন্ত তো বিভিন্ন রোগের সৃষ্টি হতেই পারে।

আবার অনেক সময় কেউ ধূমপান করল, অন্য কেউ প্রতিবাদ করলো, এর মধ্যে কিন্তু একটি দ্বন্দ্ব তৈরি হয়ে যেতে পারে।

প্রশ্ন: সর্বশেষ আপনার পরামর্শ কী?

উত্তর: সুস্থ জীবন যাপন করতে হলে, ধূমপান পরিহার করতে হবে। বুঝতে হবে, ধূমপান কেবল নিজের ক্ষতি নয়, নিজের সন্তানদের ক্ষতি। আর নিজের জীবন বিপন্ন হয়ে গেলে তো পরিবারের অন্যান্য লোকের জীবনও বিপন্ন হয়ে যাবে। আর তাই ধূমপান এখন থেকেই বন্ধ করতে হবে।