১০:৫৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫
৮ ট্রিলিয়ন ডলারের সংকট

যুদ্ধকামী নীতির কারণে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্রে

যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসীদের বিরুদ্ধে হুমকি-ধমকির ঘটনা অনেক বেড়ে গেছে এবং অনেক মার্কিন নাগরিককেই আত্মরক্ষার জন্য বন্দুক বহন করতে দেখা যাচ্ছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এই প্রবণতা আগের চেয়ে বেড়েছে।
আমেরিকার অনেক নাগরিকই এখন দেশি-বিদেশি বিপদের আশঙ্কায় অবসর সময়ে এমন সব কাজ করছে যা নতুন এক প্রবণতা বলা যেতে পারে। সাপ্তাহিক ছুটিতে তারা শুটিং অর্থাৎ বন্দুক চালানোর অনুশীলন করছে এবং ভয়ে অনেকেই তাদের মুখমণ্ডলে ক্যামোফ্লাজ পেইন্ট ব্যবহার করছে। তারা শুধু মজা করার জন্য ক্যামোফ্লাজ পেইন্ট ব্যবহার করছে না বরং অভিবাসীদের সম্ভাব্য হুমকির বিরুদ্ধে প্রস্তুতি নিতেও এই কাজগুলো করছে তারা। এসব নাগরিক শুধু রাস্তায় চলাফেরার সময় নয়, ব্যবসা সংক্রান্ত বৈঠকেও অস্ত্র নিয়ে হাজির হচ্ছে। এ ধরনের নাগরিকদের বেশিরভাগই গ্রামীণ এলাকায় বসবাসকারী শ্বেতাঙ্গ মানুষ, তারা একাকীবোধ করে এবং অন্যদের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করতে ভয় পায়। মোট কথা তারা মারাত্মক নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে।
২০১৯ সালে করোনা মহামারির শুরুর আগেও সমাজ-গবেষকদের পাশাপাশি সরকারি কর্মকর্তারা দেখতে পান, একাকীত্ব অনুভব করেন এমন মানুষের সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে। গ্রামীণ এবং বয়স্ক ব্যক্তিদের প্রতি পাঁচ জনের মধ্যে তিন জন এ ধরণের সমস্যায় ভুগছেন। এ ধরণের অনুভূতি মানুষকে নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে। হৃদরোগসহ নানা শারীরিক সমস্যার পাশাপাশি বিষণ্ণতা ও আত্মহত্যার প্রবণতার মতো সমস্যাকে বাড়িয়ে দেয়। এ ধরণের মানুষের সামাজিক সম্পর্ক অনেক দুর্বল হয়। অভিবাসী দেখলেই তারা খেপে যান এবং অভিবাসীদেরকে মারধর করতে শুরু করেন। সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং তার সমর্থকদের মধ্যে এ ধরণের প্রবণতা বেশি।
বিখ্যাত দার্শনিক হানা আরেন্ট একাধিপত্যকামী আন্দোলন সম্পর্কে বলেছেন, যারা নিজেদেরকে অক্ষম এবং বিচ্ছিন্ন মনে করে তারা এই ধরনের আন্দোলনে বেশি যোগ দেয়। আসলে ট্রাম্প এবং তার সহযোগী নেতারা মানুষের একাকীত্বের অনুভূতির সুযোগ নিয়ে একে সামাজিক আন্দোলনে পরিণত করেছেন। এই পরিস্থিতি ট্রাম্পের মতো লোকদেরকে বিশেষ সুবিধা দিচ্ছে।
এর পাশাপাশি যুদ্ধের বিশাল ব্যয় এবং বিশাল সামরিক বাজেট সব সময় সামাজিক কর্মসূচিতে বিনিয়োগ এবং জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের পরিবর্তে একাকীত্ব ও বিচ্ছিন্নতাকে উসকে দেয়। ব্রাউন ইউনিভার্সিটির ‘দ্য কস্টস অফ ওয়ার প্রজেক্ট’ থেকে এটা স্পষ্ট, যুদ্ধের জন্য আট ট্রিলিয়ন ডলারেরও বেশি ব্যয় করা হয়েছে, যা আমেরিকার জনগণের জীবনমানের উন্নয়ন এবং মানুষের একাকীত্ব ও বিচ্ছিন্নতার অনুভূতি কমাতে ব্যয় করলে বড় ধরনের ইতিবাচক ফল পাওয়া সম্ভব হতো।
সবশেষে এটা বলা যায়, যদি সামাজিক বিষয়াদির উন্নয়ন ঘটানোকে গুরুত্ব দেওয়া না হয় এবং বাজেটের কাঠামোতে পরিবর্তন না আসে অর্থাৎ যদি যুদ্ধই অগ্রাধিকার পে ত থাকে তাহলে মার্কিন জনগণের একাকীত্ব ও ক্রোধের আগুন গোটা দেশকেই জ্বালিয়ে দেবে।

Tag :
About Author Information

আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি রয়েছে সৌম্যর সরকারের মধ্যে

বিজ্ঞাপনের নামে ৬ লাখ টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগে অনলাইন টিভির বিরুদ্ধে ব্যবসায়ীদের মানববন্ধন

৮ ট্রিলিয়ন ডলারের সংকট

যুদ্ধকামী নীতির কারণে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্রে

আপডেট টাইম : ১২:০১:০৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ২২ মে ২০২৪

যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসীদের বিরুদ্ধে হুমকি-ধমকির ঘটনা অনেক বেড়ে গেছে এবং অনেক মার্কিন নাগরিককেই আত্মরক্ষার জন্য বন্দুক বহন করতে দেখা যাচ্ছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এই প্রবণতা আগের চেয়ে বেড়েছে।
আমেরিকার অনেক নাগরিকই এখন দেশি-বিদেশি বিপদের আশঙ্কায় অবসর সময়ে এমন সব কাজ করছে যা নতুন এক প্রবণতা বলা যেতে পারে। সাপ্তাহিক ছুটিতে তারা শুটিং অর্থাৎ বন্দুক চালানোর অনুশীলন করছে এবং ভয়ে অনেকেই তাদের মুখমণ্ডলে ক্যামোফ্লাজ পেইন্ট ব্যবহার করছে। তারা শুধু মজা করার জন্য ক্যামোফ্লাজ পেইন্ট ব্যবহার করছে না বরং অভিবাসীদের সম্ভাব্য হুমকির বিরুদ্ধে প্রস্তুতি নিতেও এই কাজগুলো করছে তারা। এসব নাগরিক শুধু রাস্তায় চলাফেরার সময় নয়, ব্যবসা সংক্রান্ত বৈঠকেও অস্ত্র নিয়ে হাজির হচ্ছে। এ ধরনের নাগরিকদের বেশিরভাগই গ্রামীণ এলাকায় বসবাসকারী শ্বেতাঙ্গ মানুষ, তারা একাকীবোধ করে এবং অন্যদের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করতে ভয় পায়। মোট কথা তারা মারাত্মক নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে।
২০১৯ সালে করোনা মহামারির শুরুর আগেও সমাজ-গবেষকদের পাশাপাশি সরকারি কর্মকর্তারা দেখতে পান, একাকীত্ব অনুভব করেন এমন মানুষের সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে। গ্রামীণ এবং বয়স্ক ব্যক্তিদের প্রতি পাঁচ জনের মধ্যে তিন জন এ ধরণের সমস্যায় ভুগছেন। এ ধরণের অনুভূতি মানুষকে নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে। হৃদরোগসহ নানা শারীরিক সমস্যার পাশাপাশি বিষণ্ণতা ও আত্মহত্যার প্রবণতার মতো সমস্যাকে বাড়িয়ে দেয়। এ ধরণের মানুষের সামাজিক সম্পর্ক অনেক দুর্বল হয়। অভিবাসী দেখলেই তারা খেপে যান এবং অভিবাসীদেরকে মারধর করতে শুরু করেন। সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং তার সমর্থকদের মধ্যে এ ধরণের প্রবণতা বেশি।
বিখ্যাত দার্শনিক হানা আরেন্ট একাধিপত্যকামী আন্দোলন সম্পর্কে বলেছেন, যারা নিজেদেরকে অক্ষম এবং বিচ্ছিন্ন মনে করে তারা এই ধরনের আন্দোলনে বেশি যোগ দেয়। আসলে ট্রাম্প এবং তার সহযোগী নেতারা মানুষের একাকীত্বের অনুভূতির সুযোগ নিয়ে একে সামাজিক আন্দোলনে পরিণত করেছেন। এই পরিস্থিতি ট্রাম্পের মতো লোকদেরকে বিশেষ সুবিধা দিচ্ছে।
এর পাশাপাশি যুদ্ধের বিশাল ব্যয় এবং বিশাল সামরিক বাজেট সব সময় সামাজিক কর্মসূচিতে বিনিয়োগ এবং জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের পরিবর্তে একাকীত্ব ও বিচ্ছিন্নতাকে উসকে দেয়। ব্রাউন ইউনিভার্সিটির ‘দ্য কস্টস অফ ওয়ার প্রজেক্ট’ থেকে এটা স্পষ্ট, যুদ্ধের জন্য আট ট্রিলিয়ন ডলারেরও বেশি ব্যয় করা হয়েছে, যা আমেরিকার জনগণের জীবনমানের উন্নয়ন এবং মানুষের একাকীত্ব ও বিচ্ছিন্নতার অনুভূতি কমাতে ব্যয় করলে বড় ধরনের ইতিবাচক ফল পাওয়া সম্ভব হতো।
সবশেষে এটা বলা যায়, যদি সামাজিক বিষয়াদির উন্নয়ন ঘটানোকে গুরুত্ব দেওয়া না হয় এবং বাজেটের কাঠামোতে পরিবর্তন না আসে অর্থাৎ যদি যুদ্ধই অগ্রাধিকার পে ত থাকে তাহলে মার্কিন জনগণের একাকীত্ব ও ক্রোধের আগুন গোটা দেশকেই জ্বালিয়ে দেবে।