০২:০৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ২০ মে ২০২৪

শুরু হল মঙ্গল শোভাযাত্রা ১৪২৯

  • নিউজ ডেস্ক
  • আপডেট টাইম : ১০:১০:৫৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৪ এপ্রিল ২০২২
  • ৩৭৬ বার পঠিত

মঙ্গল শোভাযাত্রা

গত ২ বছর বৈশ্বিক মহামারি করোনা কেড়ে নিয়েছিল স্বাভাবিক জীবনের ছন্দ। মহামারির দুঃসময় কাটিয়ে ফের এসেছে স্বাভাবিকতার আলোর ছোঁয়া। নতুন বছরেও স্বাভাবিকতার এ আলোকে ধরে রাখার প্রত্যাশায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শুরু হয়েছে মঙ্গল শোভাযাত্রা। সেই প্রত্যাশার ভাষিক প্রকাশের জন্য প্রখ্যাত বাঙালি গীতিকার ও সুরকার রজনীকান্ত সেনের একটি গীতিকবিতার চরণ ধার করে এবারের শোভাযাত্রার মূল প্রতিপাদ্য ঠিক করা হয়েছে, ‘নির্মল করো, মঙ্গল করে মলিন মর্ম মুছায়ে।”

বাঙ্গালীর বাংলা নববর্ষের প্রথম দিন পয়লা বৈশাখ আজ বৃহস্পতিবার। রমজান মাস হওয়ায় এবারের পয়লা বৈশাখের সকালে পান্তা-ইলিশের আয়োজন হয়নি। তবে পুরোনো গ্লানি, হতাশা আর মলিনতাকে পেছনে ফেলে নতুন উদ্যমে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যাশায় নতুন বছর ১৪২৯ কে বরণ করতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে মঙ্গল শোভাযাত্রা বের হচ্ছে আজ। সকাল নয়টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকার সড়ক দ্বীপ থেকে শোভাযাত্রা শুরু হওয়ার কথা। ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ের স্মৃতি চিরন্তন চত্বর হয়ে পুনরায় টিএসসিতে এসে শেষ হবে শোভা যাত্রা।

নববর্ষের মঙ্গল শোভাযাত্রায় অংশ নিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ টিএসসি এলাকায় এসেছেন আজ সকালে টিএসসি চত্তরে। শোভাযাত্রায় অংশ নিতে আসা নারীদের অনেকের পরনে শাড়ি আর মাথায় নানা রঙের ফুল। পুরুষদের পরনে পাঞ্জাবি। তবে সবারই চোখে-মুখে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয়। শোভা যাত্রাকে ঘিরে গতকাল বুধবার রাত থেকেই টিএসসি সহ পুরো ক্যাম্পাস এলাকায় কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়। মোতায়েন আছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিপুলসংখ্যক পুলিশ সদস্য।

আশির দশ থেকে সামরিক শাসনের অন্ধকার ঘোচানোর আহ্বানে পয়লা বৈশাখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারু কলা অনুষদ থেকে একটি শোভা যাত্রা বের হয়েছিল। প্রবর্তিতে ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ নাম ধারণ করে। গত তিন দশক ধরে প্রতি বছরই পয়লা বৈশাখে চারু কলার শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে মঙ্গল শোভাযাত্রা বের হচ্ছে। ২০১৬ সালে ইউনেসকোর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের স্বীকৃতি পায় এই শোভাযাত্রা।এই মঙ্গল শোভা যাত্রাকে বাঙালির হাজার বছরের অসাম্প্রদায়িক ঐতিহ্যের মেলবন্ধনের মাধ্যমে মাধ্যম হিসেবে দেখা হয়ে থাকে।

এবারও এই মঙ্গল শোভাযাত্রার তহবিল সংগ্রহের জন্য চারুকলা অনুষদ প্রাঙ্গণে গত এক সপ্তাহ ধরে ‘আর্ট ক্যাম্প’ হয়। এখানে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও প্রখ্যাত শিল্পীদের আঁকা ছবি বিক্রি করে সংগৃহীত অর্থ খরচ হচ্ছে শোভাযাত্রার ব্যয় নির্বাহে। শোভা যাত্রার প্রস্তুতি শুরু হয় তারও এক সপ্তাহ আগে। মুখোশ, টেপা পুতুল, মাছ ও পাখির প্রতিকৃতিসহ লোক সংস্কৃতির নানা উপাদান থাকছে এবারের শোভা যাত্রায়।

গত ২০২০ সাল থেকে করোনা পরিস্থিতির কারণে মঙ্গল শোভাযাত্রা হয়নি। ২০২১ সালে হয়েছে সীমিত পরিসরে, যেখানে সবার অংশ গ্রহণের সুযোগ ছিল না। দুই বছর পর এবার অনেকটা চেনা রূপে মঙ্গল শোভা যাত্রার আয়োজন শুরু হচ্ছে। নির্মাণাধীন মেট্রোরেলের কারণে চলাচলের পথ সরু থাকায় মঙ্গল শোভা যাত্রা এবার চারুকলা অনুষদের পরিবর্তে টিএসসির সড়কদ্বীপ থেকে বের করা হচ্ছে। এ বছর মঙ্গল শোভা যাত্রার সার্বিক তত্ত্বাবধানে রয়েছে চারুকলা অনুষদের ২২ ও ২৩ তম ব্যাচ।

১৪২৯ মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রতি পাদ্যের বিষয়ে চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক নিসার হোসেন জানান, এবারের প্রতিপাদ্য অনেকটা প্রার্থনা সংগীতের মতো। করোনা মহামারির কারণে আমাদের স্বাভাবিক জীবন যাত্রার ছন্দ হারিয়ে গিয়েছিল বলতে গেলেই। মহামারি কাটিয়ে আমাদের জীব পুনরায় স্বাভাবিক ছন্দে ফিরেছে। সেই স্বাভাবিকতা ধরে রাখার প্রত্যাশায় “নির্মল করো, মঙ্গল করে মলিন মর্ম মুছায়ে চরণটি কে এবারের শোভা যাত্রার প্রতিপাদ্য করা হয়েছে।”

About Author Information

জনপ্রিয় সংবাদ

আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি রয়েছে সৌম্যর সরকারের মধ্যে

চসিকের উচ্ছেদকৃত পাঁচলাইশে সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্পের নির্মিত সেই দোকানগুলো পুনরায় চালুর পায়তারা

শুরু হল মঙ্গল শোভাযাত্রা ১৪২৯

আপডেট টাইম : ১০:১০:৫৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৪ এপ্রিল ২০২২

গত ২ বছর বৈশ্বিক মহামারি করোনা কেড়ে নিয়েছিল স্বাভাবিক জীবনের ছন্দ। মহামারির দুঃসময় কাটিয়ে ফের এসেছে স্বাভাবিকতার আলোর ছোঁয়া। নতুন বছরেও স্বাভাবিকতার এ আলোকে ধরে রাখার প্রত্যাশায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শুরু হয়েছে মঙ্গল শোভাযাত্রা। সেই প্রত্যাশার ভাষিক প্রকাশের জন্য প্রখ্যাত বাঙালি গীতিকার ও সুরকার রজনীকান্ত সেনের একটি গীতিকবিতার চরণ ধার করে এবারের শোভাযাত্রার মূল প্রতিপাদ্য ঠিক করা হয়েছে, ‘নির্মল করো, মঙ্গল করে মলিন মর্ম মুছায়ে।”

বাঙ্গালীর বাংলা নববর্ষের প্রথম দিন পয়লা বৈশাখ আজ বৃহস্পতিবার। রমজান মাস হওয়ায় এবারের পয়লা বৈশাখের সকালে পান্তা-ইলিশের আয়োজন হয়নি। তবে পুরোনো গ্লানি, হতাশা আর মলিনতাকে পেছনে ফেলে নতুন উদ্যমে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যাশায় নতুন বছর ১৪২৯ কে বরণ করতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে মঙ্গল শোভাযাত্রা বের হচ্ছে আজ। সকাল নয়টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকার সড়ক দ্বীপ থেকে শোভাযাত্রা শুরু হওয়ার কথা। ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ের স্মৃতি চিরন্তন চত্বর হয়ে পুনরায় টিএসসিতে এসে শেষ হবে শোভা যাত্রা।

নববর্ষের মঙ্গল শোভাযাত্রায় অংশ নিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ টিএসসি এলাকায় এসেছেন আজ সকালে টিএসসি চত্তরে। শোভাযাত্রায় অংশ নিতে আসা নারীদের অনেকের পরনে শাড়ি আর মাথায় নানা রঙের ফুল। পুরুষদের পরনে পাঞ্জাবি। তবে সবারই চোখে-মুখে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয়। শোভা যাত্রাকে ঘিরে গতকাল বুধবার রাত থেকেই টিএসসি সহ পুরো ক্যাম্পাস এলাকায় কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়। মোতায়েন আছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিপুলসংখ্যক পুলিশ সদস্য।

আশির দশ থেকে সামরিক শাসনের অন্ধকার ঘোচানোর আহ্বানে পয়লা বৈশাখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারু কলা অনুষদ থেকে একটি শোভা যাত্রা বের হয়েছিল। প্রবর্তিতে ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ নাম ধারণ করে। গত তিন দশক ধরে প্রতি বছরই পয়লা বৈশাখে চারু কলার শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে মঙ্গল শোভাযাত্রা বের হচ্ছে। ২০১৬ সালে ইউনেসকোর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের স্বীকৃতি পায় এই শোভাযাত্রা।এই মঙ্গল শোভা যাত্রাকে বাঙালির হাজার বছরের অসাম্প্রদায়িক ঐতিহ্যের মেলবন্ধনের মাধ্যমে মাধ্যম হিসেবে দেখা হয়ে থাকে।

এবারও এই মঙ্গল শোভাযাত্রার তহবিল সংগ্রহের জন্য চারুকলা অনুষদ প্রাঙ্গণে গত এক সপ্তাহ ধরে ‘আর্ট ক্যাম্প’ হয়। এখানে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও প্রখ্যাত শিল্পীদের আঁকা ছবি বিক্রি করে সংগৃহীত অর্থ খরচ হচ্ছে শোভাযাত্রার ব্যয় নির্বাহে। শোভা যাত্রার প্রস্তুতি শুরু হয় তারও এক সপ্তাহ আগে। মুখোশ, টেপা পুতুল, মাছ ও পাখির প্রতিকৃতিসহ লোক সংস্কৃতির নানা উপাদান থাকছে এবারের শোভা যাত্রায়।

গত ২০২০ সাল থেকে করোনা পরিস্থিতির কারণে মঙ্গল শোভাযাত্রা হয়নি। ২০২১ সালে হয়েছে সীমিত পরিসরে, যেখানে সবার অংশ গ্রহণের সুযোগ ছিল না। দুই বছর পর এবার অনেকটা চেনা রূপে মঙ্গল শোভা যাত্রার আয়োজন শুরু হচ্ছে। নির্মাণাধীন মেট্রোরেলের কারণে চলাচলের পথ সরু থাকায় মঙ্গল শোভা যাত্রা এবার চারুকলা অনুষদের পরিবর্তে টিএসসির সড়কদ্বীপ থেকে বের করা হচ্ছে। এ বছর মঙ্গল শোভা যাত্রার সার্বিক তত্ত্বাবধানে রয়েছে চারুকলা অনুষদের ২২ ও ২৩ তম ব্যাচ।

১৪২৯ মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রতি পাদ্যের বিষয়ে চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক নিসার হোসেন জানান, এবারের প্রতিপাদ্য অনেকটা প্রার্থনা সংগীতের মতো। করোনা মহামারির কারণে আমাদের স্বাভাবিক জীবন যাত্রার ছন্দ হারিয়ে গিয়েছিল বলতে গেলেই। মহামারি কাটিয়ে আমাদের জীব পুনরায় স্বাভাবিক ছন্দে ফিরেছে। সেই স্বাভাবিকতা ধরে রাখার প্রত্যাশায় “নির্মল করো, মঙ্গল করে মলিন মর্ম মুছায়ে চরণটি কে এবারের শোভা যাত্রার প্রতিপাদ্য করা হয়েছে।”